গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এ খবর জানানো হয়নি। সেক্ষেত্রে আরও কিছুক্ষণ পর জানানো হবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। আমরা জানাজা-দাফনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সৃজন বাংলা ৫২ টিভি কে বলেন, ‘অফিসিয়ালি এখনও কিছু বলতে পারছি না। আরও কিছুক্ষণ পর এ বিষয়ে জানানো হবে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ডিসেম্বরে, চট্টগ্রামের রাউজানে। সে হিসেবে ৮১ বছর ৩ মাস ১৫ দিন বয়সে ইন্তেকাল করলেন দেশের খ্যাতনামা এই জনস্বাস্থ্যবিদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় অক্সফোর্ড থেকে নিজের পড়াশোনা শেষ করে ভারতে এসে স্থাপন করেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল। স্বাধীনতার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে কম মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করেন।
১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। বিগত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় রয়েছেন রাজনৈতিকভাবেও। যদিও এ বছরে এসে রাজনৈতিকভাবে খানিকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মৃত্যুকালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্ত্রী শিরিন পি হক, কন্যা বৃষ্টি আন্না চৌধুরী, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য অনুরাগী ও ভক্ত রেখে গেছেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৬৫ সালে প্রথমে লন্ডনে যান এফআরসিএস করতে। ওই সময় তার জীবনযাত্রা ছিল অগ্রগতিমূলক। তিনি সেখানে প্লেন চালাতেন। তার প্রাইভেট প্লেনের লাইসেন্স ছিল। প্রিন্স ফিলিপসহ অন্যান্য অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা যে দোকানে স্যুট বানাতো, সেই দর্জির দোকানে তার স্যুটও বানানো হতো।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম জিএস ডা. এমএ মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘর এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টারটি হামলার শিকার হয়েছিল, সেই যাত্রীদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে বাছরখানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘‘সিলেটের কাছাকাছি যাওয়ার পর হঠাৎ একটা প্লেন এসে আমাদের হেলিকপ্টারে ফায়ার করলো। ফায়ার করার পর আমাদের অয়েল ট্যাংকারটা পড়ে গেলো। ভেতরে দুই জন পাইলট ছিল, একজন বললেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ১০মিনিট সার্ভাইভ করতে পারবো।’ ওসমানী সাহেব লাফ দিয়ে উঠে বললেন, ‘গিভ মি ইওর জ্যাকেট। ’ আমার খুব একটা দামী জ্যাকেট ছিল, ওইটা দিয়ে উনি চেষ্টা করতে ছিলেন তেলটা যেন না পড়ে দ্রুত। এদিকে জেনারেল রব চিফ অব স্টাফ, গুলি খেয়ে কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়ে গেলো। আমি তাকে নিয়ে কার্ডিয়াক মেসেজ দিচ্ছি। আমরা ভাবছি, দেশ স্বাধীন হয়ে গেলো, কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম না।’’
Leave a Reply