প্রাণের শহর ঢাকার নিয়তিতে যেন জুজু হয়ে আবাস গেড়েছে ট্রাফিক জ্যাম। ১০ মিনিটের রাস্তায় চলতে লেগে যায় ঘণ্টারও বেশি সময়। আর কিছুদিন পর থেকে শুরু হবে ইদের জ্যাম। তবে এসময়টিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে সময় নষ্ট না করে অবস্থার সঙ্গে জীবনকে মানিয়ে নেয়াই উত্তম। সেক্ষেত্রে চলুন জেনে নেই কিভাবে অস্বস্তিকর গরমে জ্যামে বসে অযথা বিরক্ত না হয়ে সময়টাকে আনন্দময় ও অর্থবহ করে তুলতে পারেন-
কাজের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া
শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী সকলেই নির্দিষ্ট কিছু কাজ নিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়টিতে সেই কাজের বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে নিতে পারেন। যেমন:
শিক্ষার্থীরা জ্যামের সময়টুকুতে পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। কর্মজীবীরা অফিসের মিটিংয়ের এজেন্ডা, প্রেজেন্টেশন বা ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিংয়ের বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি এ সময় ভালো করে একবার দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও কোন বন্ধু-বান্ধব এমনকি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কি ধরনের কথোপকথন হতে পারে তার একটা পূর্বপ্রস্তুতি কিন্তু জ্যামের সময় কিন্তু নিয়ে রাখতেই পারেন।
আগামীকালের পরিকল্পনা করা
আগামী দিন কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, কোথায় কোথায় যেতে হবে, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়গুলো ট্রাফিক জ্যামে বসেই ঠিক করে ফেলা যায়। যেহেতু আগামীকালও ট্রাফিক জ্যাম থাকবে, সেহেতু সেই কাজগুলোর জন্য সময়ের সঠিক হিসাব করে রাখা জরুরি। আর তার জন্য আজকের ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা মুহূর্তগুলো কাজে লাগিয়ে ফেলাই উত্তম।
অনলাইনে খবর পড়া
রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে স্থানীয় খবর থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ব্যাপারে সর্বশেষ খবরটি জানা থাকা উচিত। এমনকি আগামীকাল নির্দিষ্ট কোনো কারণে শহরের অধিকাংশ রাস্তায় অধিক জ্যাম থাকবে কিনা তার জন্যও খবরের পোর্টালগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
ইউটিউবে ভিডিও দেখা
দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক ছোট-খাট কাজ থাকে, যেগুলোর জন্য অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায় যে কাজগুলো আসলে অতটা কঠিন নয়। একবার দেখে নিলেই যে কেউ নিমেষেই কাজগুলো করতে পারে। বাসা থেকে বেরনোর সময় হয়ত কোনো ফার্নিচারের ছোট একটি অংশ বেকায়দায় আলাদা হয়ে গেছে, দরজার নব খুলে গেছে, বেসিনের সিঙ্কের পাইপে লিক হয়েছে ইত্যাদি। এগুলোর কীভাবে ঠিক করতে হয় তা জ্যামে বসে নিজেই ইউটিউবে শিখে ফেলা যায়। এতে খরচও বাঁচবে আর স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রেও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।
সাধারণ জ্ঞানচর্চা
বয়স অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, গুগল করে সাধারণ জ্ঞান চর্চার কাজটির জন্য ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকার সময়টা উপযুক্ত।
ইংরেজি ভাষা অনুশীলন
মনে মনে নতুন কোনো শব্দ আওড়ানো অথবা পুরনো শব্দ বা তার প্রতিশব্দ দিয়ে বাক্য গঠনের কাজগুলো বেশ দারুণভাবে করা যেতে পারে। শুধু তাই নয়; জ্যামে আটকে থেকে আশেপাশের দোকানের সাইনবোর্ড, বড় বিলবোর্ড, পোস্টারে ইংরেজি শব্দ খুঁজে বের করে তার প্রতিশব্দ মনে করা বা তা দিয়ে বাক্য রচনা করা যেতে পারে।
গল্প, উপন্যাস বা ব্লগ পড়া
যাদের ভ্রমণের সময় বই পড়ার অভ্যাস আছে, তাদের ট্রাফিক জ্যামের সময় কাটানোর জন্য এই উপায়টি সেরা। এখন মোবাইলের মধ্যেই পিডিএফ ফাইলে হাজার হাজার পৃষ্ঠার উপন্যাসগুলো সহজেই রাখা যায়। অবশ্য এই কাজটি শুধুমাত্র জ্যামের নীরব একঘেয়ে মুহূর্তগুলোর জন্য। কেননা চেঁচামেচির মধ্যে গল্প বা উপন্যাস যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তাতে মন বসানো দুষ্কর। বইয়ের পিডিএফ ভার্সন না নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মগুলোতে ব্লগ পড়া যেতে পারে। কথোপকথনের ভঙ্গিমায় লেখা সেই ব্লগগুলো দীর্ঘ জ্যামের মধ্যে ঠিক বন্ধুর মতই সঙ্গ দেবে।
Leave a Reply