1. admin@srejonbangla52tv.com : Srejon Bangla 52 tv :
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

করোনা টিকা প্রকল্পেও গাড়ি বিলাস, আবদার ২৩ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

করোনার টিকা কিনতে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। এ অর্থায়নে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কথা দেশের পাঁচ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর পাশাপাশি যানবাহনের জন্য চাওয়া হয়েছে বাড়তি টাকা। বৈশ্বিক সংকট বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, করোনার টিকা কেনার জন্য বিশ্বব্যাংক ছয়শ কোটি ডলারের যে তহবিল গঠন করে, সেখান থেকে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ পায় সরকার। নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবনায় চাওয়া হয়েছে বাড়তি যানবাহন। এরই মধ্যে সংশোধিত প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাড়তি যানবাহনের প্রস্তাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক সংকট চলছে। কোনো বিভাগ বা মন্ত্রণালয় কিছু চাইলেই আমরা অনুমোদন দেবো না। নতুন প্রস্তাবনায় ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে যানবাহন খাতে। এগুলো অ্যানালাইসিস করবো। আসলে এ প্রস্তাবনা কতটুকু যৌক্তিক তা দেখবো। পিইসি সভার পরে একনেকে উঠবে। সব কিছুই আমরা দেখবো। এজন্যই বিষয়গুলো শনাক্ত করেছি।’

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের জন্য কতগুলো ও কী ধরনের যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে তা জানা প্রয়োজন। যানবাহনগুলো কোথায়, কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তাও জানা দরকার। যানবাহন ভাড়ার ক্ষেত্রে নিড বেজড লেখার প্রেক্ষাপটে ব্যয় প্রাক্কলন কীভাবে করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। জুন ২০২২ পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে জিওবি ১৩ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

এছাড়া দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে এ খাতে ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যার মধ্যে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা জিওবি ও বিশ্বব্যাংক ঋণ ২১ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কতগুলো অতিরিক্ত যানবাহন ভাড়া করার প্রস্তাবনা রয়েছে তা পরিকল্পনা কমিশনকে অবহিত করতে হবে। একই সঙ্গে পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ দুই লাখ, গ্যাস ও ফুয়েল বাবদ দুই লাখ টাকা ব্যয় ধরার যৌক্তিকতা জানা দরকার বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভার কার্যপত্র তৈরি করা হয়েছে। কার্যপত্রে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল এক হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৬ হাজার ৬১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণ দেবে। বাকি ৪৮২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা মেটানো হবে জিওবি খাত থেকে।

প্রকল্পটি এপ্রিল ২০২০ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। নতুন করে ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এর মধ্যে সরকারি অর্থ ৬৯ কোটি এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ ৬৮১ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে আরও নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সংশোধন প্রস্তাবে শুধু জিওবি খাতে ৩১০ কোটি টাকাসহ দুই বছর সাত মাস মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জিওবির কোন কোন খাতে এ বায় বেড়েছে এবং সময় বাড়ানোর যৌক্তিক কারণগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

জুন ২০২২ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ৫৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, যার মধ্যে জিওবি খাতে ৫১ কোটি এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ ৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ার যৌক্তিক কারণসহ প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ ৬০ কোটি ডলার এবং এআইআইবি ঋণ ১০ কোটি ডলার।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্প অফিসের জন্য ১৪ জন জনবলের বেতন বাবদ ২ কোটি ২০ লাখ, এমার্জেন্সি ম্যান পাওয়ার হিসেবে ১ হাজার ১৫৪ জন জনবলের আউটসোর্সিং বাবদ ৩৯৩ টাকার প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনবল কমিটির কোনো সুপারিশ আরডিপিপিতে পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে জনবল কমিটির সুপারিশ আরডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। জুন ২০২২ পর্যন্ত আউটসোর্সিং বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পে বিনোদন বাবদ ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল প্রকল্পে সম্মানি বাবদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। নতুন করে ৫৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব খাতের বাড়তি ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যানবাহন কেনা হোক বা যে কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় যদি অবজারভেশন থাকে তবে এগুলো দেখবো। পিইসি সভা অনুসরণ করেই সব কিছু করা হবে। আর কোনো বিষয় যদি আলোচনা করে ঠিক করতে হয় তা আলোচনা করেই ঠিক করবো।’

কোডিড-১৯ শনাক্ত ও রোগ নিশ্চিতকরণ, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, রেকর্ডিং ও রিপোর্টিং এবং জরুরি মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলা, ভবিষ্যৎ মহামারি প্রতিরোধে জরুরি ও নিবিড় পরিচর্যা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, স্বাস্থ্যখাতে জরুরি মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলার জনবল বৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ মহামারি রোধের প্রস্তুতির জন্য রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলা পর্যায়ে নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানো, জাতীয় ও মাঠ পর্যায়ে জরুরি চিকিৎসা সহায়ক সামগ্রী মজুত ও সরবরাহের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা প্রতিরোধ এবং প্রস্তুতির পর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কোভিড-১৯ মহামারি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্বব্যাংকের ১০ কোটি মার্কিন ডলার জরুরি ঋণ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য মূল প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মোতাবেক প্রকল্পের অধিকাংশ কার্যক্রম উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ডিউটি ও অন্য প্রয়োজনীয় খাতে প্রথম সংশোধন প্রস্তাবে অর্থ রাখা হয়নি। কাস্টমস ডিউটিসহ নতুন কিছু কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তি ও চলমান কার্যক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। বিগত তিন বছরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা প্রয়োজন হয়। এছাড়াও নতুন চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের অধিকাংশ ক্রয় কার্যক্রম আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে পরিচালনা করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ রয়েছে। ফলে কাস্টমস ডিউটি ও অন্য প্রয়োজনীয় খাতে অর্থ প্রয়োজন, যা প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ডিউটি ও অন্য প্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখার জন্য দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

৪৩টি জেলা সদর হাসপাতালের সঙ্গে নতুন সাতটি হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৫০টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এছাড়াও বায়ো সেফটি লেভেল-৩ ল্যাবরেটরিতে দুটির সঙ্গে নতুনভাবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারকে অন্তর্ভুক্তীকরণ, আরটিপিসিআর মেশিন সম্বলিত আধুনিক মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ২৭টির সঙ্গে নতুন দুটি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করে ২৯টি স্থানে স্থাপন করা হবে। ৩০টি সরকারি হাসপাতালে স্থাপিত লিকুইড মেডিকেল অক্সিজেন সিস্টেমে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভবিষ্যৎ মহামারি প্রতিরোধে জরুরি ও নিবিড় পরিচর্যা কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা হবে।

১৫টি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার স্থাপন, ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপন ও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবসটেট্রিক আইসিইউ স্থাপন করা হবে। তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নতুন ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ স্থাপন, ল্যাবরেটরি কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে অটোমেশনকরণ। এছাড়া বিভিন্ন খাতের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© srejonbangla52tv.com 2022 All rights reserved
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD