ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে এম এ খালেকের বিরুদ্ধে থেকে ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। টাকার অংকে গরমিল ও ভুয়া জমা বা ফেক ডিপোজিটের মাধ্যমে তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অর্থ আত্মসাতের পুরো প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখেন এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো, মেয়ে শারওয়াত খালেদ ও তার স্বামী তানভিরুল হক। এ ঘটনায় খালেক ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১৭ জনের মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানায়, অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি স্বজন-সহযোগীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ৫৮৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান এম এ খালেক। আদালতের নির্দেশে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধানে এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (৫ এপ্রিল) সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এসব তথ্য জানান।
মামলার আসামিরা হলেন- ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক (৭৫), সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম (৫০), মো. জাহিদুল হক (৪৪), সাবেক সিএফও এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক (৬২), খালেকের স্ত্রী শাহরিয়ার খালেদ রুশো (৩৯), খালেকের মেয়ে মিস শারওয়াত খালেদ (৩৬), খালেকের জামাতা তানভিরুল হক, খালেকের মেয়ের শ্বশুর মো. ফজলুল হক (৬৬), আবুল কাশেম মোল্লা (৭৫), রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারুল (৩৭), খশরুবা সুলতানা শিল্পী (৪৫), শেখ ইউসুফ আলী (৬১), মাহবুবা সুলতানা (৪৯), মিসেস দিলরুবা সুলতানা, মো. নজরুল ইসলাম (৫৭), মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার।
জানা গেছে, কোনো রকম অর্থ পরিশোধ না করেই খালেকের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা দেখানো হতো। খালেকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এভাবে কোটি কোটি টাকা জমা করতেন। এরপর সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিতেন। আত্মসাতের অর্থে খালেকের পরিবার কানাডায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন। তার স্ত্রী-সন্তানরাও কানাডায় পালিয়েছেন।
সিআইডি জানায়, স্বজন ছাড়াও খালেক তার সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে ফেক ডিপোজিট দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ আত্মসাতের টাকার একটি অংশ সহযোগীদের তিনি ভাগ করে দিতেন। খালেকসহ এ অপকর্মে জড়িত ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করে সিআইডি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি তরফদার জাহাঙ্গীর আলম ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটি লিমিটেড কোম্পানিতে হেড অব অপারেশন ও জাকির হোসেন ভূইয়া একই কোম্পানিতে হেড অব মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের কার্যক্রম শুরুতেই তরফদার জাহাঙ্গীর আলমকে প্রতিষ্ঠানের সিইও ও জাকির হোসেনকে এভিপি পদে নিয়োগ দেয়।
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের শুরুতেই ২০১০ ও ২০১১ সালে তরফদার জাহাঙ্গীর আলম জাকির হোসেনসহ অন্য আসামিরা ১১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার চেক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নিয়ে কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া জমার বিপরীতে মার্জিন রুল ব্যত্যয়পূর্বক লোন প্রদান করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, লুটপাটের টাকায় ঢাকার গুলশানের বারিধারায় গড়ে তোলা খালেকের ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের চারতলা আলিশান বাড়ি সম্প্রতি ক্রোক করা হয়েছে। বাড়িটি গুলশানের বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২ নম্বরে। গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বাড়িটির দলিল নম্বর ৬২১।
৮ শতাংশ ৮ ছটাকের ওপর চারতলা আলিশান বাড়িটি ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কেনেন এম এ খালেক। বাড়িটির দলিল মূল্য ছিল ৬৫ কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, বর্তমান বাড়িটির মূল্য অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।
Leave a Reply