জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত যেমন কাজে লাগানো যায় না, তেমনি কোনকিছু লিখতে বসলে কলমের প্রতিটি আঁচড়ই যে কাজে লাগে তা কেউ বলতে পারবে না আর তাই হরহামেশাই মনে হয়,
এই বুঝি লেখাটি আমার ফালতু’র খাতায় নাম লিখালো..!
ইতিপূর্বে হরেকরকম পাগলদের নিয়ে তিন পর্বের, হাসিকান্না নিয়ে দু’পর্বের আর এবার চোর-ডাকাতদের পিছে চার মিনিট > এদের নিয়ে কিছু প্রবাদ আছে,
যেমন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী, চোরের মায়ের বড় গলা, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, দশ দিন চোরের একদিন সাহুকের, চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি নাপড়ে ধরা, ডাকাতের ঘাটে নৌকা চুরি হয় না, চোরের কোনো ধর্ম নাই (তবু, বেরুনোর আগে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নাম ঠিকই নেয় আর অনেকে এ-ও বলে, ধরা পড়লে যেন পুলিশের হাতে ধরা পড়ি, পাবলিকের হাতে না.!)।
চোরের কোনো বংশ নাই তবে, অভাবের তাড়নায় বা যে কোনো কারণে এরা তৈরি হয়। এ’পেশা ছাড়তে না পারলে পরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মে এসে পড়ে আর তখুনি বলতে শোনা যায় ‘ব্যাটা চোরের বংশ’..!
যে কোনো বিষয়ের প্রশিক্ষণ বা training’এর একটা সনদপত্র দেয়া হয় কিন্তু এদের বেলায় (পিঠ চাপড়িয়ে) ওস্তাদের ‘সিকৃতি’ই যথেষ্ট।
ছিচকে চোর মানে পাড়া-মহল্লায় পাশের বাসার ইটাউটা চুরি বা হাতসাফাই থেকে শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে সে গ্যাং লিডার বা ওস্তাদ, সর্দার পর্যন্ত উঠে আসে। আরো একটি পথ যা, হুমকিধামকি দিয়ে রাতে-বেরাতে জোরপূর্বক কিছু আদায় করা, অধুনা যাকে ছিনতাই বলা হয়, সফলকাম হতে-হতে একসময়ে অনেকেই তা আর ছাড়তে পারে না। কেউ কুশলাদি জানতে চাইলে যেমন বলতে শোনা যায়,.. আছি ভাই আল্লাহর রহমতে বা ‘তিনি’ মানে সৃষ্টিকর্তা বা পরমেশ্বর যে ভাবে রাখেন.! ঠিক তেমনি এক সময়ে কোনো কোনো এলাকায় বলতে শোনা যেতো,.. আছি ভাই চোরের দয়ায়, কোনোমতে দিন পার করছি…!
অর্থাৎ ইদানিং উক্ত এলাকায় চুরিডাকাতি আর হয় না।
বৃটিশ আমলে বা শতবছর আগে এমনটি ছিল যেনো, চোর একটি দর্শনীয় প্রাণী। ‘চোর ধরা পড়েছে’ কথাটি কানে আসতেই কোথায়-কোথায় বলে দে দৌড়, চললো চোর দেখতে গ্রামশুদ্ধো একত্রে, আর ঐ বৃদ্ধা মা’টা.? মাটির হাঁড়িতে চাল চড়িয়ে ঘুঁটে-লাকড়ি দিয়ে চুলায় জাল দিতে দিতে বলছে, আহারে, বেশি মারিসনা’রে, কেবলই গোঁফ গজিয়েছে.! আবার আংগুলে ধরা বাচ্চাটি কোলে উঠেই বলছে মা, কৈ চোর.? দেখছিসনা.? ‘ঐতো রশি দিয়ে বাঁধা মোটা গাছটির সাথে, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে..! কোলের বাচ্চাটি বলে, ওতো মানুষ.!
চোর ধরতে অনেকেই যেমন ছোটখাটো কৌশল অবলম্বন করতো বা এখনো করে, তেমনি ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ১৮৩০ সালে ঠগী ও ডাকাত ধরার জন্য রীতিমতো একটা দপ্তর খুলে ফেলেছিল যা ‘Thagee & Dacoit Suppression Act, 1836-48′, বারো বছর, আর তা চালু করেও অনেককে ধরতে পারতো না, যেমন রঘু ডাকাত, বিশে ডাকাত, পণ্ডিত ডাকাত। গ্রামবাংলায় তখন দুর্ভিক্ষ অনাহার আবার খাজনার অত্যাচার আর আকাশে অপেক্ষমাণ শকুনের দল.! সেই সময়ে স্থানীয় অবস্থাসম্পন্ন, সামন্তপ্রভু, জমিদারদের বাড়িতে অনেক সময়ে খবর পাঠিয়ে বা পাল্কিতে চড়ে ডাকাতি করতো এরা, ছিল গরীবের বন্ধু। যেমন নদিয়া (বৃহত্তর কুষ্টিয়া)’র রঘু ডাকাতকে গ্রামের সাধারণ মানুষই পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতো।
আজকের পর্ব শেষ করছি বাস্তব একটি ঘটনা দিয়ে। কোনো এক মসজিদে ইফতারের দাওয়াত। আমার এক বন্ধুকে বললাম, জীবনে হরেকরকম চোর দেখেছেন, ইফতার চোর দেখেছেন…? না তো…! চলেন..। যথাসময়ে সাইরেন বা ঘড়ির কাঁটা জায়গামতো আসতেই আজান। ইফতার শুরু। সামনের লাইনে ঐ কোণায় বসা একজন। পাঞ্জাবী গায়ে উসকোখুসকো আধাপাকা দাঁড়ি। খাচ্ছে আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা-মুড়ি আর মাঝেমধ্যে এদিকসেদিক তাকিয়ে পকেটে পুরছে খেজুর খোরমা আর আপেলের পিস.! বন্ধু বলে নারে ভাই, উনি চোর না, উনি একজন ‘সন্তানের বাবা বা কোনো একজন গৃহবধুর ভরসা, ওদেরকে ভালো কিছু না খাইয়ে পেটে কোনোকিছুই হজম হয় না তার..!!!
Leave a Reply