ছয় মাস আগে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। থেমে নেই ধ্বংস ও মৃত্যু। সব কিছু ছাপিয়ে এ যুদ্ধ এখন অর্থনৈতিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যা ১৯৪০ সালের পর আর দেখা যায়নি। যুদ্ধের পর রাশিয়ার এক দশমিক আট ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমাদেশগুলো। তবে বেশ কিছু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও তার মিত্ররা রাশিয়ার হাজার হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। রাশিয়ার ৫৮০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের অর্ধেকই জব্দ করা হয়েছে। দেশটির অধিকাংশ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হবে আগামী বছরের প্রথম দিকে। রাশিয়ার কোম্পানিগুলো কোনো চিপ কিনতে পারছে না। রুশ অলিগার্কদের সম্পদ জব্দের পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ইউরোপে ভালো জনমত তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে স্বল্প মেয়াদে রাশিয়ার তারল্য সংকটের পাশাপাশি ব্যালেন্স অব পেমেন্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে যুদ্ধে অর্থ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘমেয়াদে উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার উৎপাদনশীল ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা নষ্ট করা যাতে, ভ্লাদিমির পুতিন অন্য কোনো দেশে আক্রমণ করার আকাঙ্ক্ষা না করেন।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, চলতি বছরে রাশিয়ার জিডিপি কমবে ছয় শতাংশ, যা মার্চে প্রত্যাশিত ১৫ শতাংশ বা ভেনেজুয়েলার মন্দার চেয়ে কম। তাছাড়া জ্বালানি বিক্রির ফলে দেশটির বাণিজ্য উদ্ধৃত রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাবে। এক্ষেত্রে চীনের পরেই অবস্থান হবে রাশিয়ার। নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে রাশিয়ার সংকট অনেক গভীরে ছিল। ধীরে ধীরে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে রাশিয়ার অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা চলে এসেছে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন অংশীদার খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে মন্দার ঝুঁকিতে ইউরোপ। চলতি সপ্তাহে অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। কারণ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়েছে রাশিয়া।
দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রে ত্রুটি আছে। সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো বিশ্বের শতাধিক দেশ নিষেধাজ্ঞা নীতির সঙ্গে একমত নয়, যা বিশ্ব জিডিপির ৪০ শতাংশ। রাশিয়ার তেল এশিয়ায় যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে আমিরাতের অনেক ভালো সম্পর্ক রয়েছে। একটি বিশ্বায়িত অর্থনীতি ধাক্কা ও সুযোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু বেশিরভাগ দেশের পশ্চিমা নীতি প্রয়োগ করার কোনো ইচ্ছা নেই।
Leave a Reply